বিড়ম্বনা

ভালোবাসা / ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৫)

মোঃ মোজাহারুল ইসলাম শাওন
  • ১৯
সকাল থেকেই মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে আছে মিউ এর। মিউ পেশায় নবীন চিকিতসক।পেশা শুরুর প্রথমেই বিয়ে করেছে পছন্দের মানুষটিকে। কিন্তু আজকাল তার মনে হচ্ছে এই পছন্দের মানুষের প্রতি তার যতটুকু টান, ততটুকু টান তার প্রতি ঐ পছন্দের মানুষের নাই।এটি অবশ্য তার নিজের ভাবনা। কিন্তু তার ভাবনার পুরোই উল্টা মেরুতে তার হাবি। এই নিয়ে তার মেজাজ খারাপের ডিগ্রি অনেক উপরে।আর এক্টু কিছু হলেই তার পাগল হবার দশা। সাত দিন পর হাবির সাথে দেখা হবে ভাবতেই রাতের ঘুম হারাম। অথচ তার হাবি ঘুমে অচেতন। এইটা কিছু হল?

মোবাইল করলেও অপর প্রান্তে সাড়া মিলছে না। তাই করা ভাষায় দুই দুই টি মেসেজ দিল। কিন্তু তাতেও কোন সাড়া মিলল না।রাগ করে শীতের তীব্রতার মাঝেও পুরা এক ঘন্টা লেপ ছাড়াই শুয়ে থাকল। ফলে সকালে গলা বসে গেল।সকালে কথাই বেড় হতে চায় না গলা দিয়ে। এদিকে মেসেজ পড়ে মেসেজের মুল অর্থ না বুঝে হাবি বাকা অর্থ ধরে নিয়ে বকা দিল। মেজাজের উপর এমন চাপ পরল যেন নিজের জীবনের অর্থ নিয়েই বিড়ম্বনা মনে হতে থাকল।

তিন মাস হয়েছে বিয়ে।বাবা মায়ের সাথে দেখাই হয়নি। একা একা বিয়ে করে এখন বাবামায়েরে খুব দেখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বাবার মেজাজ সপ্তমে।তাই বাবার সাথে যোগাযোগ করেনি সে।শুধু একদিন বাবাকে ফোন দিয়েছিল। বাবা অপর প্রান্ত থেকে কেন ফোন দিয়েছ জানতে চাইতেই মিউ দৃঢ়ভাবে বলেছিল ঃ তোমার কন্ঠ শোনার জন্য। ব্যাস, আর বাবার সাথে কথা বলেনি। তবে মা নিয়মিত কথা বলে। সেখানেও তাদের স্বার্থ নিয়ে কথা।
আচ্ছা মানুষের জীবন এমন কেন?
বাবা মা ভাই বোন সব্বাই শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবে। সমাজে সবাই যদি নিজেদের বিষয় ষোল আনা বোঝে তো অন্যদের কি হবে? সে কি এমন করেছে? শুধু বয়স্ক একজনকে বিয়ে করেছে।এতে তার কি দোষ? কত পুরুষ, তরুন যুবা প্রৌঢ় পুরুষ তো দেখেছে, কারো জন্যতো সে কোন কিছু টান অনুভব করেনি।যা তার এই হাবিকে নিয়ে অনুভব করেছে?

আচ্ছা সব্বাই যে বলে হায়াত, মউত, রিজিক আর বিয়ে নাকি নির্দিষ্ট থাকে। একমাত্র আল্লাহর নিকট থেকে এই ফয়সালা হয়? তাহলে আমার হাবির জন্য আমার এই অনুভুতি এবং ওর সাথে আমার বিয়ে কি নির্দিষ্ট ছিল না? এখন মানুষ এমন কথা বলে কেন? মানুষের এই দ্বিত্ব চরিত্র মিউ এর খুব অপছন্দ। সে খুব নিশ্চিত যে ওর জম্ম হয়েছে এই হাবির জন্য। সে ভাবে যে ওর হাবির সংসারের সমস্যা দেখেই আল্লাহ ওর জুটি হিসাবে ২৪ বতসর পর তাকে পাঠিয়েছে। তাই দুনিয়ার মানুষ কে কি বলল বা বলুক তা নিয়ে তার কোন ভাবনা নাই। সে শুধু হাবিকে নিয়ে সুখি হতে চায়।

মিউ এর হাবি তার চেয়ে ২৪ বতসরের বড়। নির্মোহ জীবন, সাহসী এবং সদা হাসিখুশি একজন সত মানুষ।জীবনের প্রতি তার অসীম উন্মাদনা যা তাকে খুব আকৃষ্ট করেছে। লম্বা স্বাস্থ্যবান এবং সুদর্শন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন।বাবা হিসাবে, শিক্ষক হিসাবে এবং সর্বপরি মানুষ হিসাবে আকর্শনীয়। রাশভারী কিন্তু মনে রসে ভরা। এই মানুষটিকে প্রথম দর্শণেই ওর খুব ভাল লেগে যায়।তখন কোনদিন এই মানুষের জীবনের ছায়ায় লুকায়িত ক্রন্দন থাকতে পারে ভাবেনি।আলোর নীচে যেমন আধার, তেমনি এই সদা হাস্যজ্বল মানুষের বুকের ভিতর গাঢ় নিরানন্দ। মিউ বুঝে অনেক দেরীতে। যখন তার এই ভিতরের অসুখি চরিত্র প্রকাশিত হয় মিউএর কাছে, তখন মিউ তার কাছে ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যাত।মিউ এবং তাদের অনেকের কাছে প্রিয় এই শিক্ষক তাকে তার ভালবাসার দাবী ফিরিয়ে দিয়েছেন।প্রথমে তাকে বুঝিয়েছে, এরপর তার উন্মাদনা দেখে হতভম্ব হয়েছেন বুঝেছে, তবুও বারবার এই মানুষের কাছে পাবার ব্যকুলতা নিয়ে ফিরে গেছে। সর্বশেষ তাকে পাগলামির জন্যে গালমন্দ করেছে, ফিরিয়ে দিয়েছে খুব রুঢ় ব্যবহার করেই।সেদিন মিউ ঘুমাতে পারেনি।আজও আতকে উঠে সেই দিনের কথা ভেবে।এই মানুষের কাছে এত বয়সের ব্যবধান এবং এই ভালবাসা অগ্রহণীয়।কিন্তু মিউ এর কাছে তিনিই ধ্যন, জ্ঞান জীবন যৌবন আশার প্রদীপ।মিউ ভাবতে থাকে এই মানুষকে কিভাবে আপন করে পাওয়া যায়....

ডিজিটাল যুগের মানুষ সে। যদিও পুরোপুরি ডিজিটাল বিষয় গুলোকে সে অপছন্দ করে। বিশেষ করে জীবনবোধে পুরো ডিজিটাল তার কাম্য নয়। জীবনে জোস্না স্নান যত রোমাঞ্চকর ততটুকু রোমাঞ্চ কি ডিজিটাল আনন্দের খেলা গুলো দিতে পারে? মিউ ভাবে কক্ষনো নয়। তাই তো তার চেতনায় মিশে আছে হাবির হাত ধরে পদ্মা-যমুনার সংগমস্থল দেখা, পদ্মার চরে হাত ধরে হেটে বেড়ানো বা জসিম মেলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুজে বেড়ানো। হুম তার হাবিকে সে এই গুলোতে খুব সহ্যোগিতা পায়। তার জীবন্ত সেই সব দৃশ্য মনে হলেই মন আনন্দে তা ধেই তা ধেই নেচে উঠে। সব আনন্দের সাথেই কষ্টগুলো আস্টেপিষ্টে লেগে থাকে। মিউএর ধারণা এইটি তার বেলায় বেশীই ঘটে।

ক্ষনিকেই তার মনে প্রচন্ড আবেগ এসে ভর করে। নিজেকে দমাবার চেষ্টায় সে সফল হয় না। যত রাগ যেয়ে পরে হাবির উপর। পরবেই না কেন তার আর কে আছে, হাবি ছাড়া? মাবাবা দুনিয়ার সব তুচ্ছ করেই তো সে ছুটে গিয়েছিল অনিশ্চিত জীবনে। একমুহুর্তের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হলে, দোদুল্যমন নিয়ে পিছু হটলে আজকেই মিউ কই যেত? ভাবতেই শরীরের লোম খাড়া হয়ে ওঠে। পরক্ষনেই মন বড় শীতল হয় তার হাবির আচরণে।দীর্ঘদিন খেয়ালে রাখা রাগী এই লোকটি কত মমত্ত্ব দিয়ে তাকে বুকে স্থান দিয়েছে যা তার অনুভুতির অংশ, দেখানো বা কাউকে বুঝানো যায় না।

তার হাবি ব্যস্ত, সেও ব্যস্ত। বাস্তবের নিরিখে দুইজনের এই ব্যস্ততা তাদের দুই মেরুতে নিয়ে দাড় করিয়েছে। সাথে যোগ হয়েছে রাষ্ট্রিয় বিড়ম্বনা। হরতাল, অবরোধ বোমাবাজী অধিকারের সংগ্রাম যে যার মত বিররণ দেয়। এতে মিউ এর কোন খেয়াল নেই।তার ভাবনায় চাহিবা মাত্র হাবির সম্মুখে উপস্থিতি ছাড়া ভিন্নতা কাম্য নয়।রাত এলে এই ভাবনা তাকে কুরে কুরে খায়।
সে কঠিন ভাষায় মেসেজ দিয়েছেঃ তার আর আসার কোন দরকার নাই, থাকুক তার চেম্বার নিয়ে, ব্যস্ততা নিয়ে।

মজার ব্যাপার তার হাবি তাকে যতই বাস্তবতা বুঝাতে যায়, তার রাগ আরও চরমে ওঠে।একসময় হাবিকে রাগিয়ে দেয়। হাবির দুর থেকে এই রাগ অনুভবের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়।একসময় শরীরের সমস্ত কোষ ধারালো সুচের মত বিধতে থাকে, সমষ্টিগত অনুরননে মনটা নেচে উঠে। কী যে এক ভালোলাগা ভালোলাগা অনুভুতি.....

হাবির ফোন পেয়ে থমকে মোবাইলের দিকে তাকায়। শরীরে তখন শীহরনের চরম অনুভুতি। হাবি কি বলছে বোঝা যাচ্ছে না। পঞ্চ ইন্দ্রিয় কাজ করছে না, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের চাহিদায় জীবন মরুময় শীতলতা চায়।কিন্তু কানে আসছে হাবির গুরু গম্ভির কন্ঠ। যার প্রতিটি ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলে সে পাগল হয়, সেই ধ্বনি বাক্যে পরিনত হয়ে তাকে সম্বিত ফেরায়।
হাবির কন্ঠে উচ্চারিত বাক্যের অর্থ মনে প্রোথিত হতে শুরু করেঃ তুমি দেশের অরাজকতা কে আমলে নিচ্ছ না, শীতের ভোরের প্রচন্ড ঘন কুয়াসাকে আমলে নিলে না। পেট্রোল বোমার আতংক কে পাত্তা দিচ্ছ না, তোমার একমাত্র চাহিদার মুল্য আমি দেই নি ভাবছ; এটি ঠিক নয়, লক্ষ্মি।আমি যদি বেচে ফিরি সব হবে, ধৈর্য হারাইও না। বরং আল্লাহ কে স্মরন করো যেন সুস্থ্য দেহ মনে তোমার কাছে পৌছুতে পারি। লক্ষি বউ, বাস্তব কে অস্বীকার করে জীবন চলে না....

শরীরের আন্দোলন থেমে যায়, মিউ শান্ত হতে থাকে।হাবির শান্ত কিন্তু দৃঢ় শব্দ উচ্চারণে তার মন শান্ত হয়। অপেক্ষায় থাকা অশান্ত মন নিমিষেই পদ্মার শীতল জলের সমিরণের দোলায় ভরে যায়।
সে ফোন দেয়... হাবি জানায় পদ্মায় কুয়াসায় তাদের লঞ্চ ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার শান্ত মনে হাবিকে দেখার জন্য অন্য অনুভুতি, তাকে কাছে পাওয়ার চেয়্র কাছে রাখার অনুভুতি প্রবল হতে থাকে। হাবির শান্ত স্বরের বাক্যে বিগলিত মন কাজে ডুবে যায়।


হাবি পৌছে তাকে জানালে সে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। হাতের কাজ শেষ করে এক দৌড়ে হাবির কাছে চলে আসে। হাবির প্রসস্থ বুকে নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে ঢুকিয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিতেই থাকে, নিতেই থাকে।হাবি মৃদু লাজুক হাসিতে কখন তার চোখের কোনের জমে থাকা বিন্দু বিন্দু অশ্রু পকেটে থাকা টিসু দিয়ে মুছিয়ে দেয়, বুঝতে পারে না; নাকি বুঝতে চায় না.... মিউ বলতে পারে না।সে তখন অন্য জগতের অন্য মুহুর্তের শীহরণে ডুব দেবার নতুন অপেক্ষায় নিজেকে প্রস্তুত করে নিজের অলক্ষ্যেই...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ ব্যতিক্রমী চিন্তার দারুন ফসল, খুব ভাল লাগল
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
Arif Billah ধারাবহিক বর্ননার মাঝে এক চমৎকার কাহিনীর অবতারণা করেছেন গল্পে। অনেক শুভ কামনা রইল। ভোট রেখে গেলাম।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
রবিউল ই রুবেন বিড়ম্বনা গল্পটি ভালো লাগল। শুভকামনা ও ভোট রইল। আমার লেখা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

২৯ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪